খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা

অঞ্জলি ১

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

প্রিয় শিক্ষার্থী, এ অঞ্জলি চলাকালীন শিক্ষক তোমাকে কিছু মজার ও আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবেন। তুমি পবিত্র বাইবেল লেখার ইতিহাস জানার সাথে সাথে সুদৃশ্য ও সচিত্র বাইবেল দেখবে। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ পৃথিবীতে যীশুর আগমন সম্পর্কে জেনে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে। মণ্ডলীর ঐতিহ্যসমূহ জানতে পারবে ও নিজ জীবনে তা অনুশীলন করতে পারবে।

Content added By

পবিত্র বাইবেল কে লিখেছেন

প্রিয় শিক্ষার্থী, সপ্তম শ্রেণির প্রথম খ্রীষ্টধর্ম সেশনে তোমাকে স্বাগত জানাই। এই সেশনের প্রথমে তোমার কোনো সহপাঠী হয়তো পবিত্র বাইবেল পাঠ করবে অথবা শিক্ষক যদি তোমাকে বাইবেল পাঠের জন্য নির্বাচিত করে তুমিও পাঠ করতে পারো। শান্ত হয়ে মনোযোগ দিয়ে বাইবেলের বাণী শুনো। যদি তুমি বাইবেলের পঠিত পদগুলোর অর্থ না বুঝতে পারো পরে শিক্ষককে প্রশ্ন করে জেনে নিও।

Ottheinrich বা অঠ্হাইনরিশ্ বাইবেল

এবার শিক্ষক তোমাকে মাল্টিমিডিয়ায়/ছবিতে Ottheinrich বা অঠহাইন্‌রিশ্ বাইবেল-এর একটা পৃষ্ঠা দেখাবেন। পরের পাতায় এরকম একটি পৃষ্ঠার ছবি দেওয়া আছে। আর দেখো, অঠহাইন্‌রিশ্ বাইবেল-এর যে পৃষ্ঠাটি এখানে দেওয়া আছে সে পৃষ্ঠাটিতে মথি ৪-এর সচিত্রায়ন হয়েছে। তোমাদের বোঝার জন্য ঐ একই অংশের Common Language Bible-এর বাংলা আর ইংরেজি পৃষ্ঠাটিও দেওয়া হয়েছে। দেখো অর্থগতভাবে বাইবেল ঠিক আছে যদিও এর ভাষা ভিন্ন হয়েছে, এবং এর বাণী হাজারো বছর ধরে মানুষকে আলো দেখাচ্ছে।

তোমাদের জানাই, পৃথিবীর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সচিত্র বাইবেল-এর একটি হলো Ottheinrich বা অঠহাইনরিশ্ বাইবেল।

এটা জার্মান ভাষায় নতুন নিয়মের প্রাচীনতম এখনো সংরক্ষিত থাকা সচিত্র বাইবেল। সম্ভবত ১৪৩০ খ্রীষ্টাব্দে বাভারিয়া-ইঙ্গলসস্ট্যাড-এর (বর্তমান জার্মানি) ডিউক বা রাজা সপ্তম লুডভিগ এই বাইবেল অনুবাদ এবং অলঙ্করণের কাজটি শুরু করিয়েছিলেন। বাইবেলটির ভাষা ছিল সম্ভবত ইঙ্গলসস্ট্যাড। সব মিলিয়ে, এই দুর্দান্তভাবে অলঙ্কৃত বাইবেলে ৩০৭টি পশুচর্ম পাতায় ১৪৬টি চিত্র এবং ২৯৪টি অলঙ্কৃত অক্ষরসমৃদ্ধ অনুচ্ছেদ রয়েছে।

ভেবে দেখো তো, এখন থেকে কত বছর আগে ১৪৩০ খ্রীষ্টাব্দ ছিল? দেখেছ কত কত বছর আগে এই মনোরম বাইবেলটি লেখা হয়েছিল? তোমরা আরো অবাক হবে যে যীশুর জন্মের ১০০০ বছর আগে বাইবেল লেখা শুরু হয়েছিল হিব্রু ভাষায়। অনুমান করা হয় যে খ্রীষ্টপূর্ব ১২০০-১৬৫ অব্দের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) হিব্রু ভাষায় লেখা হয়েছিল।

বাড়ির কাজ

বাড়িতে গিয়ে নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে বাবা-মা/অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করবে। তাদের কাছ থেকে যা জানতে পারবে তা লিখে পরের সেশনে নিয়ে আসবে।

প্রশ্নগুলো হলো :

- পবিত্র বাইবেল কে লিখেছেন?

- বাইবেলে কয়টি ভাগ আছে?

- কোন ভাগে কয়টি পুস্তক আছে?

- আমরা বাইবেল পড়ে কী জানতে পারি?

এতো সুন্দর একটি বাইবেল দেখলে, এখন তোমার মনের মাধুরী মিশিয়ে বাইবেলের একটি প্রচ্ছদ নিচে এঁকে ফেলো।

 

Content added By

সেশনের শুরুতে শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানাও। এ সেশনে শিক্ষক তোমাদের ৫/৬টি দলে ভাগ করবেন। তোমরা নিজেরাই দলনেতা নির্বাচন করবে। তুমি ইচ্ছে করলে দলনেতা হতে পারো। শিক্ষক প্রতিটি দলে নিচের প্রশ্নসংবলিত চিরকুট দিবেন আলোচনার জন্য। তোমরা আলোচনার জন্য ১০ মিনিট সময় পাবে।

প্রশ্নগুলো হলো :

- পবিত্র বাইবেল কে লিখেছেন?

- বাইবেলের নতুন নিয়মে কী আলোচনা করা হয়েছে?

- বাইবেলের পুরাতন নিয়মে কোন ঘটনাসমূহ আলোচনা করা হয়েছে?

- আমরা কেন বাইবেল পাঠ করি?

দশ মিনিট আলোচনার পর প্রতিদলের দলনেতাগণ একসাথে বসবে এবং নিজ দলের আলোচনার বিষয় শেয়ার করবে। দলনেতা অন্য দল থেকে পাওয়া নতুন তথ্য সংগ্রহ করে নিজ দলের সাথে শেয়ার করবে।

Content added By

বাইবেলের রচয়িতা একমাত্র ঈশ্বর

শুভেচ্ছা বিনিময় করো এবং সমবেত প্রার্থনা করে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নাও ।

প্রিয় শিক্ষার্থী, মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর ও তাঁর নির্দেশাবলি জানার একমাত্র উৎস হচ্ছে বাইবেল। বাইবেলের প্রতিটি বাক্য হচ্ছে ঈশ্বরের বাণী। বাইবেল পড়ে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা ও নির্দেশনা জানতে পারি। বাইবেল হচ্ছে খ্রীষ্টধর্মীয় জ্ঞানের মৌলিক উৎস। স্বয়ং ঈশ্বর বাইবেলের রচিয়তা।

চলো দেখি পবিত্র বাইবেলে এ বিষয়ে কী লেখা আছে।

ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষালাভ করেছ। আর এই পবিত্র শাস্ত্রই তোমাকে যীশুখ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে। পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি, যাতে ঈশ্বরের লোক সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে ভালো কাজ করবার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।  ২ তীমথিয় ৩ : ১৫-১৭

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

নিঃসন্দেহে বাইবেলের রচিয়তা একমাত্র ঈশ্বর। পবিত্র আত্মা বিভিন্ন প্রবক্তা ও প্রেরিত শিষ্যদের তার জ্ঞানে অনুপ্রাণিত করে ঈশ্বরের বাক্য লিখতে পরিচালিত করেছেন। ঈশ্বরের মনোনীত ৪০জন ব্যক্তি ১৬০০ বছরে বাইবেল লিখেছেন। এই ব্যক্তিগণ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। যেমন যিশাইয় ছিলেন একজন ভাববাদী, ইস্রা ছিলেন যাজক, মথি ছিলেন কর-আদায়কারী, মোশী ছিলেন মেষপালক, লুক ছিলেন চিকিৎসক, পৌল তাবু সেলাই করতেন, যোহন ছিলেন জেলে। তাঁরা সবাই ভিন্ন ধরনের ব্যক্তি এবং ১৬০০ বছরেরর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও বাইবেলের ঘটনা বর্ণনায় কোনো বৈপরীত্য নেই বরং ধারাবাহিকতা রয়েছে।

বাইবেল লেখকগণ সবাই নিজ ভাষায় এক ঈশ্বরের কথা এবং মানুষের পরিত্রাণের পথ যে যীশুখ্ৰীষ্ট তা প্রকাশ করেছেন। এটা একমাত্র সম্ভব হয় যদি সম্পূর্ণ বাইবেল ঈশ্বরের পরিচালনাতেই লেখা হয়।

পবিত্র বাইবেল কী

গ্রিক শব্দ “বিবলিয়া” থেকে এসেছে বাইবেল। বাইবেলের যথার্থ অর্থ বই বা পুস্তক। বাইবেলে ছোট-বড় বেশ কটি পুস্তক আছে। পবিত্র বাইবেল লেখা শুরু হয়েছিল খ্রীষ্টের জন্মের ৯৫০ বছর পূর্বে, রাজা দায়ুদ ও সলোমনের রাজত্বকালে। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় কয়েকজন লেখক বাইবেল লিখেছেন। বাইবেল হলো ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে ভালোবাসার এক দীর্ঘ ইতিহাস। পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলোর একটির সাথে অন্যটির ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে।

পবিত্র বাইবেলের ভাগসমূহ

পবিত্র বাইবেল প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত - পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম। নিয়ম মানে সন্ধি। এ কারণে এ ভাগ দুটিকে যথাক্রমে প্রাক্তন সন্ধি ও নবসন্ধি বলা হয়।

পুরাতন নিয়ম বা প্রাক্তন সন্ধি

পুরাতন নিয়মে যীশুখ্রীষ্টের জন্মের পূর্বের কথা লেখা হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর ভক্ত আব্রাহামের সাথে এক মহাসন্ধি স্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আব্রাহামের বংশ আকাশের তারকারাজির মতো ও সমুদ্রতীরের বালুকণার মতো অগণিত হবে। আব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের আপন করে নিয়েছেন এবং চেয়েছেন যেন তারাও ঈশ্বরকে ভালোবাসেন। এভাবে ঈশ্বর ও ইস্রায়েল জাতির মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরাতন নিয়মে এ সম্পর্কই প্রাধান্য লাভ করেছে। ঈশ্বর তাঁর এ জাতির জন্য রাজা ও প্রবক্তাদের পাঠিয়েছেন। তাঁরা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করেছেন। পুরাতন নিয়মে তারই ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায় ব্যবহৃত বাইবেলে পুরাতন নিয়মে ৩৯টি পুস্তক আছে এবং রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায় ব্যবহৃত বাইবেলে পুরাতন নিয়মে ৪৬টি পুস্তক রয়েছে। এ পুস্তকগুলো চারভাগে বিভক্ত।

১) পঞ্চপুস্তক (৫টি) 

২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (১৬টি) 

৩) জ্ঞানধর্মী পুস্তক (৭টি) 

৪) প্রাবক্তিক পুস্তকসমূহ (১৮টি)

নতুন নিয়ম বা নব সন্ধি

দীক্ষাগুরু সাধু যোহনের জন্ম থেকে শুরু করে প্রেরিত শিষ্যদের বাণী প্রচার কাজ নিয়ে নব সন্ধি লেখা হয়েছে। নতুন নিয়মে পুস্তকের সংখ্যা ২৭টি। এ পুস্তক আবার পাঁচভাগে বিভক্ত। যথা :

১) মঙ্গল সমাচার (সুসমাচার), যাতে আছে চারটি বই : মথি, মার্ক, লুক, যোহন

২) খ্রীষ্ট মণ্ডলীর ইতিহাস, যাতে আছে একটি বই : শিষ্যচরিত বা প্রেরিতদের কার্যাবলী

৩) সাধু পলের (পৌলের) নামে পরিচিত ধর্মপত্রসমূহ-১৪টি। যথা : রোমীয়, ১ করিন্থীয়, ২ করিন্থীয়, গালাতীয়, এফেসিয় (ইফিসিয়), ফিলিপীয়, কলসীয়, ১ থেসালোনিকীয়, ২ থেসালোনিকীয়, ১ তিমথি, ২ তিমথি, তীত, ফিলেমন, হিব্রুদের কাছে ধর্মপত্র

৪) সাতটি কাথলিক ধর্মপত্র বা পত্র। যথা : যাকোব, ১ পিতর, ২ পিতর, যোহন, ১ যোহন, ২ যোহন, ৩ যোহন, যুদের (যিহূদা)

৫) প্রাবক্তিক গ্রন্থ ১টি, যথা : প্রত্যাদেশ বা প্রকাশিত বাক্য

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক আলাদা দুটি পোস্টার পেপারে পুরাতন নিয়মের ও নতুন পুস্তকসমূহের নাম প্রদর্শন করবে । তুমি নিশ্চয়ই এ থেকে পুস্তকগুলোর নামের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

পবিত্র বাইবেল পাঠের গুরুত্ব

বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের বাণী। আমরা যেমন প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি ঠিক তেমনি বাইবেল পাঠের মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে পারি। বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আমরা খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের সঠিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা পাই। বাইবেলের বাণী আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে দৃঢ় করে। যেমন আদিপুস্তক পাঠ করে ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা পালনে অনুপ্রাণিত হয়। নতুন নিয়মে রয়েছে যীশুর দেয়া নতুন বিধিবিধান যা আমাদের ঈশ্বর, মানুষ ও প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে।

বাইবেল, মানব জাতির মুক্তির ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনা

বাইবেলে রয়েছে মোট ৭৩টি পুস্তক (প্রোটেস্টান্ট বাইবেলে ৬৬টি)। এই পুস্তকগুলোতে মানব জাতির মুক্তির ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষক তোমাদের নিচের প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি সহজভাবে বোঝাতে পারেন।

আদিপুস্তক : আব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি, তাঁর বংশ আকাশের তারকারাজির মতো হবে এবং তারা হবে তাঁর আপন জাতি আর তার বংশেই জন্ম নিবে মানব জাতির ত্রাণকর্তা

যাত্রাপুস্তক : মিশরদেশ থেকে মোশীর মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির মুক্তি এবং মোশির হাতে দশ আজ্ঞা প্রদান

রাজাবলী : কয়েক রাজা যেমন, সলোমন ও দায়ুদের মাধ্যমে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করেন এবং দায়ুদ বংশে উদ্ধারকর্তার জন্ম নিবে এই প্রতিশ্রুতি দেন

বিভিন্ন প্রবক্তাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন যারা ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বরের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন এবং প্রবক্তাগণ যীশুর জন্ম বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাবাণী করেছেন

বাইবেলের নতুন নিয়মে মঙ্গলসমাচারে দেখানো হয়েছে দায়ুদ বংশেই যীশুর জন্ম হয়েছে এবং যীশুই সেই মশীহ যার আসবার কথা প্রবক্তাগণ বলে গেছেন

Content added By

বাইবেল কুইজ প্রতিযোগিতা

শিক্ষক পূর্বের সেশনে তোমাদের ৫/৬টি দলে ভাগ করবেন এবং প্রত্যেক দলনেতাকে নির্দেশ দিবেন যেন তারা বাইবেলের নির্দিষ্ট অংশ থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য ১০/১২টি প্রশ্ন তৈরি করে।

বাইবেল কুইজের জন্য বাইবেল থেকে নির্বাচিত বিষয়বস্তু শিক্ষক আগেই তোমাদের জানিয়ে দিবেন।

প্রত্যেক দলনেতা নিজের তৈরি প্রশ্নপত্রটি অন্য দলকে সমাধান করতে দিবে এবং সে নিজে অন্য দলেরটি সমাধান করবে। তোমরা প্রত্যেক দল ১০ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্রটি সমাধান করবে। যে বেশি নম্বর পাবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এবার প্রত্যেক দলনেতা নিজের প্রশ্নপত্রের উত্তর জোরে পাঠ করবে যাতে অন্যরা ভুল উত্তরের সঠিক উত্তর জেনে নিতে পারে।

তথ্য মিল করো

এ সেশনে শিক্ষক তোমাকে একটি টেবিল তৈরি করে দিবেন যেটাতে প্রথম কলামে বাইবেলের পুস্তকের নাম এবং ২য় কলামে বাইবেলের কিছু ঘটনা এলোমেলোভাবে দেয়া থাকবে। তোমার কাজ হচ্ছে পুস্তকের নামের সাথে ঘটনার মিল করা। যেমন :

পুস্তকের নামঘটনা
যাত্রাপুস্তকযীশু-কে শয়তান পরীক্ষা করল
আদিপুস্তকসাধু স্তেফান শহিদ হলেন
শিষ্যচরিত/প্রেরিতযীশুর জন্ম
মথিইসরায়েলীয়রা লোহিত সাগর পাড়ি দিলেন
মার্কঅব্রাহাম (আব্রাহাম)-এর মহাপরীক্ষা

বাইবেলের নির্দেশনা মেনে দুটি কাজ করে পরবর্তী সেশনে উপস্থাপন করবে।

Content added By

তুমি নিশ্চয়ই তোমার শিক্ষক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তিনি কোথায় থাকেন, তার পরিবারে কে কে আছে তা কি তুমি জানতে চাও? আজ তোমার শিক্ষক তার family tree (বংশতালিকা) পোস্টার পেপারে এঁকে তোমাদের দেখাব। প্রত্যেক মানুষই তার family tree বা বংশতালিকা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী কারণ এটা তার পরিচয়ের সূত্র।

তোমাকে যদি বলি প্রপিতামহ থেকে শুরু করে তুমি-পর্যন্ত family tree তৈরি করো, তুমি নিশ্চয়ই এটা করতে পারবে। তুমি একা যদি না পারো তোমার বাবা-মা তোমাকে সাহায্য করলে কাজটি সহজ হয়ে যাবে। তোমার বাবা-মা অথবা কাকা-পিসিদের কাছ থেকে দাদুর/দাদুর বাবা সম্পর্কে তথ্য নিতে পারো। যেমন : তাদের নাম ও তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা জেনে নিতে পারো। তোমার কাজ সহজ করার জন্য পাশের পৃষ্ঠায় একটি family tree দেওয়া আছে, দেখো। এটা পূরণ করে, তারপরে রং করে ফেলো।

বাড়িতে গিয়ে তুমি বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার দাদু/ঠাকুরদাদা, দাদি/ঠাকুরমার নাম জেনে নিবে এবং নিজের family tree তৈরি করে পরবর্তী সেশনে নিয়ে আসবে।

 

Content added By

শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানাও। প্রার্থনা/গানে অংশগ্রহণ করো।

দলগত আলোচনা

শিক্ষক তোমাদের ৫/৬টি দলে ভাগ করবেন। তোমরা দলে একজন দলনেতা নির্বাচন করবে। শিক্ষক চিরকুটে লেখা চারটি প্রশ্ন প্রতিটি দলে সরবরাহ করবেন। প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ো।

প্রশ্নগুলো হলো :

- যীশুর জন্ম সম্পর্কে ভাববাদীগণ কী বলেছেন? 

- যীশুর জন্মের ঘটনার সাথে যুক্ত আছেন যাঁরা তাদের নাম লিখ। । 

- যীশু কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন? 

- কে যীশুর আগমনের জন্য লোকদের প্রস্তুত করেছেন?

আলোচনা শেষে দলনেতাগণ প্রশ্নগুলোর উত্তর পোস্টার পেপারে লিখে সেশনরুমের সামনে ঝুলিয়ে দিবেন। প্রতিটি দলের সদস্য অন্য দলের লেখা পড়বে । তুমি যেসব পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে তা নিজের নোট বুকে লিখে রাখবে।

 

Content added By

ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি

শ্রেণি কার্যক্রমের শুরুতে সবার সাথে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো।

ঈশ্বর অব্রাহাম এবং ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যীশু দায়ূদ বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। চলো দেখি বাইবেলে এ বিষয়ে কী লেখা আছে।

প্রভু যীশুখ্রীষ্টের বংশতালিকা

যীশুখ্রীষ্ট দায়ূদের বংশের এবং দায়ূদ অব্রাহামের বংশের লোক। [...]মথি ১ : ১

অব্রাহামের ছেলে ইস্হাক; ইস্হাকের ছেলে যাকোব; যাকোবের ছেলে যিহূদা ও তাঁর ভাইয়েরা; যিহুদার ছেলে পেরস ও সেরহ তাঁদের মা ছিলেন তামর; পেরসের ছেলে হিথ্রোণ; হিথ্রোণের ছেলে রাম; রামের ছেলে অম্মীনাদব; অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন; নহশোনের ছেলে সল্‌মোন; সমোনের ছেলে বোয়স তাঁর মা ছিলেন রাহব; বোয়সের ছেলে ওবেদ তাঁর মা ছিলেন রূত; ওবেদের ছেলে যিশয়; যিশয়ের ছেলে রাজা দায়ূদ।

দায়ূদের ছেলে শলোমন-তাঁর মা ছিলেন উরিয়ের বিধবা স্ত্রী; শলোমনের ছেলে রহবিয়াম; রহবিয়ামের ছেলে অবিয়; অবিয়ের ছেলে আসা; আসার ছেলে যিহোশাফট; যিহোশাফটের ছেলে যোরাম; যোরামের ছেলে ঊষিয়; ঊষিয়ের ছেলে যোথম; যোথমের ছেলে আহস; আহসের ছেলে হিষ্কিয়; হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি; মনঃশির ছেলে আমোন; আমোনের ছেলে যোশিয়; যোশিয়ের ছেলে যিকনিয় ও তাঁর ভাইয়েরা-ইস্রায়েল জাতিকে বাবিল দেশে বন্দী হিসাবে নিয়ে যাবার সময় এঁরা ছিলেন।

যিকনিয়ের ছেলে শল্টিয়েল-ইস্রায়েল জাতিকে বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাবার পরে এঁর জন্ম হয়েছিল; শল্ টিয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল; সরুব্বাবিলের ছেলে অবীহূদ; অবীহূদের ছেলে ইলীয়াকীম; ইলীয়াকীমের ছেলে আসোর; আসোরের ছেলে সাদোক; সাদোকের ছেলে আখীম; আখীমের ছেলে ইলীহূদ; ইলীহূদের ছেলে ইলিয়াসর; ইলিয়াসরের ছেলে মত্তন; মত্তনের ছেলে যাকোব; যাকোবের ছেলে যোষেফ-ইনি মরিয়মের স্বামী। এই মরিয়মের গর্ভে যীশু, যাঁকে খ্রীষ্ট বলা হয়, তাঁর জন্ম হয়েছিল।

এইভাবে অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; দায়ূদ থেকে বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; বাবিলে বন্দী হবার পর থেকে খ্রীষ্ট পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ। মেথি ১ : ২-১৭

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

ঈশ্বরভক্ত অব্রাহাম ছিলেন ঈশ্বরের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। ঈশ্বর আব্রাহামকে বলেছিলেন যে তার বংশের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে। রাজা দায়ুদ আব্রাহামের বংশের লোক। এ দায়ুদ বংশেই যীশু জন্মগ্রহণ করেছেন। যীশুই সেই মশীহ যার জন্য ইস্রায়েল জাতি অপেক্ষা করছিল। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে ভাববাদীদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দায়ুদ বংশে যীশুর জন্মের মধ্য দিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে।

যীশুর Family Tree

তোমার মতো যীশুরও বংশপরিচয় আছে। যীশুর বংশতালিকায় যাদের নাম উল্লেখযোগ্য তাদের নাম লিখে যীশুর Family Tree আঁকো। আদম-হবা থেকে শুরু করে কার কার নাম উল্লেখযোগ্য তাদের নামগুলো জানতে হবে শুধু Family Tree তৈরি করার জন্য নয়, তাদের নাম জানা দরকার কারণ তারা মানব জাতির মুক্তির ইতিহাসে ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন।

বাপ্তিস্মদাতা যোহনের জন্মের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাবাণী

দীক্ষাগুরু যোহন যীশুর আগমনের জন্য লোকদের প্রস্তুত করেছেন। তার বাবা-মা হলেন সখরিয় ও ইলীশাবেত। ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক বেশি বয়সে ইলীশাবেত এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সখরিয় তার নাম দেন যোহন। চলো দেখি বাইবেলে এ বিষয়ে কী লেখা আছে।

এমন সময় ধূপ-বেদীর ডানদিকে প্রভুর একজন দূত হঠাৎ এসে সখরিয়কে দেখা দিলেন। স্বর্গদূতকে দেখে তাঁর মন অস্থির হয়ে উঠল এবং তিনি ভয় পেলেন।

স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “সখরিয়, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমার প্রার্থনা শুনেছেন। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেতের একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম রেখো যোহন। সে তোমার জীবনে মহা আনন্দের কারণ হবে এবং তার জন্মের দরুন আরও অনেকে আনন্দিত হবে, কারণ প্রভুর চোখে সে মহান হবে। ইস্রায়েলীয়দের অনেককেই সে তাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে আনবে। নবী (ভাববাদী) এলিয়ের মত মনোভাব ও শক্তি নিয়ে সে প্রভুর আগে আসবে। সে বাবার মন সন্তানের দিকে ফিরাবে এবং অবাধ্য লোকদের মনের ভাব বদলে ঈশ্বরভক্ত লোকদের মনের ভাবের মত করবে। এইভাবে সে প্রভুর জন্য এক দল লোককে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।” লূক ১ : ১১-১৪, ১৬-১৭

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে যীশুর অগ্রদূত বলা হয়। কারণ যীশুর আগে এসে তিনি মানুষকে প্রস্তুত করেছেন যাতে তারা যীশুকে গ্রহণ করতে পারে। সেই আব্রাহাম থেকে শুরু করে মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রতীক্ষা করেছে একজন মুক্তিদাতার জন্য। যোহনের জন্মের মধ্য দিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যীশু আসছেন। যোহন শিখিয়েছেন কীভাবে পাপের ক্ষমা লাভ করে ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থাকা যায়।

ঈশ্বর আব্রাহাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রবক্তার মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতিকে জানিয়েছেন যে ঈশ্বরপুত্র যীশু দায়ুদবংশে জন্মগ্রহণ করবেন। ইলীশাবেতের যখন ছয় মাসের গর্ভ তখন স্বর্গদূত গাব্রিয়েল মারিয়াকে দেখা দিলেন। চলো দেখি, গাব্রিয়েল দূত মারিয়াকে কী বলে যীশুর জন্মসংবাদ দিয়েছিলেন।

প্রভু যীশুর জন্মের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাবাণী

ইলীশাবেতের যখন ছয় মাসের গর্ভ তখন ঈশ্বর গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রামের মরিয়ম নামে একটি কুমারী মেয়ের কাছে গাব্রিয়েল দূতকে পাঠালেন। রাজা দায়ূদের বংশের যোষেফ নামে একজন লোকের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়েছিল। স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “প্রভু তোমার সঙ্গে আছেন এবং তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।”

এই কথা শুনে মরিয়মের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল। তিনি ভাবতে লাগলেন এই রকম শুভেচ্ছার মানে কি স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “মরিয়ম, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে। তিনি মহান হবেন। তাঁকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। প্রভু ঈশ্বর তাঁর পূর্বপুরুষ রাজা দায়ূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন। তিনি যাকোবের বংশের লোকদের উপরে চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।”

তখন মরিয়ম স্বর্গদূতকে বললেন, “এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয় নি।”

স্বর্গদূত বললেন, “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এইজন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। দেখ, এই বুড়ো বয়সে তোমার আত্মীয়া ইলীশাবেতের গর্ভের ছেলের জন্ম হয়েছে। লোকে বলত তার ছেলেমেয়ে হবে না, কিন্তু এখন তার ছয় মাস চলছে। ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছুই নেই।”

মরিয়ম বললেন, “আমি প্রভুর দাসী, আপনার কথামতই আমার উপর সব কিছু হোক।” এর পরে স্বর্গদূত মরিয়মের কাছ থেকে চলে গেলেন। লুক ১ : ২৬-৩৮

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

ঈশ্বর তাঁর প্রিয় ইস্রায়েল জাতিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঈশ্বরপুত্র মানুষ হয়ে এ পৃথিবীতে আসবেন আর মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করবেন। তিনি দায়ুদ বংশে এবং মারিয়া নামে এক কুমারী মেয়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন। স্বর্গদূত যখন মারিয়াকে যীশুর জন্মসংবাদ দিয়েছেন তখন যোষেফের সাথে মারিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। যোষেফ ছিলেন দায়ুদ বংশের লোক। মারিয়া ছিলেন ঈশ্বর অনুরাগী। ঈশ্বরের এ ইচ্ছাকে তিনি মেনে নিয়েছেন।

তোমরা জানো যে স্বর্গদূত গাব্রিয়েল মারিয়াকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে মারিয়া গর্ভবতী হয়েছেন পবিত্র আত্মার প্রভাবে এবং তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিবেন। তার নাম হবে যীশু। যীশুকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। এ শুভ সংবাদ জানানোর জন্য মারিয়া/মরিয়ম তাঁর জ্ঞাতি বোন ইলীশাবেতের কাছে গেল ।

ইলীশাবেতের ঘরে মরিয়ম

তারপর মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে যিহূদিয়া প্রদেশের একটা গ্রামে গেলেন। গ্রামটা পাহাড়ি এলাকায় ছিল। মরিয়ম সেখানে সখরিয়ের বাড়িতে ঢুকে ইলীশাবেতকে শুভেচ্ছা জানালেন। ইলীশাবেত যখন মরিয়মের কথা শুনলেন তখন তাঁর গর্ভের শিশুটি নেচে উঠল। তিনি পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে জোরে জোরে বললেন, “সমস্ত স্ত্রীলোকদের মধ্যে তুমি ধন্যা এবং তোমার যে সন্তান হবে সেই সন্তানও ধন্য। আমার প্রভুর মা আমার কাছে এসেছেন, এ কেমন করে সম্ভব হল? যখনই আমি তোমার কথা শুনলাম তখনই আমার গর্ভের শিশুটি আনন্দে নেচে উঠল। তুমি ধন্যা, কারণ তুমি বিশ্বাস করেছ যে, প্রভু তোমাকে যা বলেছেন তা পূর্ণ হবে।” লুক ১ : ৩৯-৪৫

মারিয়া (মরিয়ম)-এর মুখে ঈশ্বরের প্রশংসাগীতি

এবার প্রশংসাগীতিটি গেয়ে শোনাও।

তখন মরিয়ম বললেন,

“আমার হৃদয় প্রভুর প্রশংসা করছে;

আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়ে

আমার অন্তর আনন্দে ভরে উঠছে,

কারণ তাঁর এই সামান্যা দাসীর দিকে

তিনি মনোযোগ দিয়েছেন।

এখন থেকে সব লোক আমাকে ধন্যা বলবে,

তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে

যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,

সেইমতই তিনি তাঁর দাস

ইস্রায়েলকে সাহায্য করেছেন।

অব্রাহাম ও তাঁর বংশের লোকদের উপরে

চিরকাল করুণা করবার কথা তিনি মনে রেখেছেন।”

লুক ১ : ৪৬-৪৮, ৫৪-৫৫

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

মারিয়া ইলীশাবেতের কাছে যীশুর জন্ম সংবাদ দিতে গেল। ইলীশাবেত মারিয়াকে দেখে খুবই খুশি হলেন, তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করলেন কারণ তাঁর প্রভুর মা তাঁর কাছে গিয়েছে। মারিয়া/মরিয়ম নারীকুলে ধন্যা কারণ তিনি ঈশ্বরপুত্র যীশুর মা। মারিয়া/মরিয়ম দ্বিধাহীন মনে বিশ্বাস করেছেন যে ঈশ্বর যা বলেছেন তা পূর্ণ হবে। ইলীশাবেতের সম্ভাষণ পেয়ে মারিয়া/মরিয়ম আনন্দচিত্তে ঈশ্বরের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ঈশ্বরের এ মহান করুণার জন্য কৃতজ্ঞ।

ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য মুক্তিদাতা ঈশ্বরকে পাঠাবেন। মানুষ যাতে যীশুকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে এজন্য ঈশ্বর যোহনকে আগে পাঠিয়েছেন। যোহন মানুষ কে শিখিয়েছে কিভাবে নিজেকে সংশোধন করে ঈশ্বরের ভালোবাসা পাওয়া যায়। চলো এ বিষয়ে বাইবেল থেকে পাঠ করি।

বাপ্তিস্মদাতা যোহনের জন্ম

সময় পূর্ণ হলে পর ইলীশাবেতের একটি ছেলে হল। তাঁর উপর প্রভুর প্রচুর করুণার কথা শুনে প্রতিবেশীরা ও আত্মীয়েরা তাঁর সঙ্গে আনন্দ করতে লাগল। যিহূদীদের নিয়মমতো আট দিনের দিন তারা ছেলেটির সুন্নত করাবার কাজে যোগ দিতে আসলো। তারা ছেলেটির নাম তার বাবার নামের মত সখরিয় রাখতে চাইল, কিন্তু তার মা বললেন, “না, এর নাম যোহন রাখা হবে।”

তারা ইলীশাবেতকে বলল, “আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তো কারও ঐ নাম নেই।”

তারা ইশারা করে ছেলেটির বাবার কাছ থেকে জানতে চাইল তিনি কি নাম দিতে চান। সখরিয় লিখবার জিনিস চেয়ে নিয়ে লিখলেন, “ওর নাম যোহন।” লুক ১ : ৫৭-৬৩

সেই শপথ তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ

অব্রাহামের কাছে করেছিলেন।

তিনি শত্রুদের হাত থেকে

আমাদের উদ্ধার করেছেন

যেন যতদিন বেঁচে থাকি 

পবিত্র ও সৎভাবে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে 

নির্ভয়ে তাঁর সেবা করতে পারি। 

সন্তান আমার,

তোমাকে মহান ঈশ্বরের নবী বলা হবে, 

কারণ তুমি তাঁর পথ ঠিক করবার জন্য 

তাঁর আগে আগে চলবে। 

তুমি তাঁর লোকদের জানাবে, 

কিভাবে আমাদের ঈশ্বরের করুণার দরুন 

পাপের ক্ষমা পেয়ে

পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। 

তাঁর করুণায় স্বর্গ থেকে এক উঠন্ত সূর্য 

আমাদের উপর নেমে আসবেন, 

লূক ১ : ৭৩-৭৮

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

বাপ্তিস্মদাতা যোহনের জন্ম মানুষের পরিত্রাণের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কীভাবে পাপের ক্ষমা পেয়ে ঈশ্বরের দয়া লাভ করা যায় তা তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। তিনি যীশুর আগে এসেছেন মানুষকে প্রস্তুত করার জন্য যাতে তারা যীশুর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারে।

Content added By

শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানাও। গত সেশনগুলোতে তোমরা ঈশ্বরের মহা পরিকল্পনা অনুযায়ী কীভাবে বাপ্তিস্মদাতা যোহন এবং যীশু জন্মগ্রহণ করেছেন তা জানতে পেরেছ। আজ শিক্ষক তোমাদের একটি মজার কাজ দিবেন।

সুন্দর একটি ছবি আঁকো

মারিয়ার গর্ভে মুক্তিদাতা যীশুর জন্ম, এ সুসংবাদ দিতে ইলীশাবেতের বাড়িতে মারিয়া এ বিষয়ের ওপর তুমি নিশ্চয়ই একটি ছবি আঁকতে পারবে। তুমি কল্পনা কর যে মারিয়া পাহাড়ি পথ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। তারপর ইলীশাবেতের বাড়িতে পৌঁছে গেছে, ইলীশাবেত ঘর থেকে বেরিয়ে বোনকে অর্থাৎ মুক্তিদাতার মাকে উৎফুল্ল হয়ে জড়িয়ে ধরেছে। তোমার অন্য সহপাঠীরাও ছবি আঁকছে। নির্দিষ্ট সময়ে ছবি আঁকা শেষ হলে শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী বুলেটিন বোর্ডে লাগিয়ে দাও। তারপর অন্যদের ছবিগুলো লক্ষ করো । তোমাদের সবার আঁকা ছবিই ভিন্ন ভিন্নভাবে সুন্দর হয়েছে, তাই না? কারণ তোমাদের কল্পনা ভিন্ন ভিন্ন।

বাড়ির কাজ

শিক্ষক তোমাদের ৪/৬টি দলে ভাগ করবেন। নিজ দলের দলনেতা নিজেরাই তৈরি করবে। অভিনয়ের বিষয়বস্তু – সখরিয়ের সাথে স্বর্গদূতের এবং ইলীশাবেতের সাথে মারিয়ার কথোপকথন। দুটি বিষয় থেকে তোমার দল যেকোনো একটি বিষয় বেছে নিবে। তুমি মনে মনে ঠিক করে ফেলো কোন চরিত্রে তুমি অভিনয় করবে। নির্দিষ্ট সময় পরে শিক্ষকের কাছে script জমা দাও। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন দিবেন। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিনয়ের জন্য পরবর্তী সেশনে প্রস্তুত হয়ে আসবে।

দলে তোমার যে চরিত্রটি পড়েছে তার সাপেক্ষে যে পোশাকটি হতে পারে সেটাও নির্বাচন করে ফেলো। প্রয়োজনে তোমার শিক্ষক বা পিতা-মাতা/অভিভাবকের সাহায্য নাও। একটা বিষয় হতে পারে যে, সেই সময় মানুষেরা কেমন পোশাক পরিধান করত সেটা তুমি জেনে নিতে পারো এবং এরপর চেষ্টা করতে পারো যে ওরকম পোশাকের ব্যবস্থা তুমি করতে পারো কি না ।

 

Content added By

অভিনয়ের স্থানটি তোমাদের প্রয়োজনমতো সাজিয়ে ফেলো। অভিনয়ের জন্য তোমার চরিত্রের পোশাকটিও তুমি পরে ফেলো। তোমার বন্ধুকেও তা করতে সাহায্য করো। শিক্ষক বলবেন যে অভিনয়ের জন্য তোমরা পাঁচ মিনিট সময় পাবে। ঐ সময় সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করো।

অবসরে ভূমিকাভিনয়ের দৃশ্যগুলো ভেবে একটি ছবি এঁকে ফেলো।

 

Content added By

শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বাইবেল পাঠ ও ভূমিকাভিনয় থেকে বুঝতে পেরেছ যে যীশুর জন্ম মানব জাতির পাপ থেকে মুক্তির ইতিহাসে ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় কাজ করার জন্য ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন তাদের ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা ছিল। সখরিয়, ইলীশাবেত, মারিয়া – প্রত্যেকেই যীশুর আগমনের পথকে নিরবচ্ছিন্ন করতে নিজের জীবন সঁপে দিয়েছেন। এ বিষয়ে যদি তোমাদের মনে কোনো প্রশ্ন থাকে তবে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারো। তোমার সামনে যখন কোনো ভালো কাজ করার সুযোগ আসে তুমি তখন কি তা উৎসাহ নিয়ে করো? মনে রাখবে যে ভালো কাজ করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা যীশুর আসার প্রতীক্ষায় ছিলেন। আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করি যে যীশু আবার আসবেন শেষ বিচারের দিন। এজন্য আমরা প্রার্থনা, ভালো কাজ, ও উপবাসের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি। আমরা যীশুর জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং পুনরাগমনে বিশ্বাস করি। আমরা পবিত্রভাবে জীবনযাপন করি যাতে শেষ বিচারের দিন যীশুর সাথে স্বর্গরাজ্যে যেতে পারি।

যীশুকে গ্রহণ করতে নিজেকে প্রস্তুত করো

আজ হতে দুই হাজার বছর পূর্বে যীশু এসেছিলেন। তিনি তাঁর শিক্ষা, উপদেশ ও আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন কীভাবে মানুষ ঈশ্বরের সন্তান হয়ে উঠতে পারে এবং স্বর্গরাজ্যের অধিকারী হতে পারে। ভালোবাসা, প্রার্থনা, উপবাস, পরোপকার, দয়া, ক্ষমা এর মধ্যে কোনটি করে তুমি নিজেকে প্রস্তুত করবে যাতে যীশুকে গ্রহণ করতে পারো?

যেকোনো দুইটি কাজ করে পরবর্তী সেশনে উপস্থাপন করবে।

Content added By

তোমার শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানাও। তুমি কি প্রশংসামূলক প্রার্থনা করতে পারো? শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আজ সেশনের শুরুতে তুমি একটি প্রশংসামূলক প্রার্থনা বলতে পারো।

উপস্থাপনা

পূর্ববর্তী সেশনে শিক্ষকের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তুমি যে দুটি কাজ করেছ তা ছক আকারে লিখে আজ উপস্থাপন করবে। নিচে নমুনা দেয়া হলো—

প্ৰাৰ্থনাপ্রতিদিন সন্ধ্যায় বাইবেল পাঠ এবং প্রার্থনা করি।প্রতি রবিবারে প্রার্থনায় যোগ দেই।
ক্ষমাপরিবারে ছোট বোন অন্যায় করে অনুতপ্ত হয়েছে আর আমি তাকে ক্ষমা করেছি।সহপাঠী বা বন্ধু খারাপ আচরণ করেছে আর আমি তাকে ক্ষমা করেছি।

এ ভালো কাজগুলো নিয়মিত করে তুমি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে যীশুকে গ্রহণ করার জন্য, এভাবে যীশুর শিক্ষা অনুসরণ করে তুমি একজন পবিত্র মানুষ হয়ে উঠতে পারো। সেশন শেষে শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাও।

Content added By

মন্ডলীর ঐতিহ্য জানব

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক আজ শ্রেণিকক্ষে মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষা সম্পর্কে তোমাদের কয়েকটি পুস্তক ও কিছু দ্রব্যাদি দেখাবেন। তোমাদের কাছে কিছুটা নতুন মনে হতে পারে আবার একটু কঠিনও লাগতে পারে। তুমি ভয় পেয়ো না, শিক্ষক সহজ করেই পরিচালনা করবেন।

শিক্ষক তোমাদের কিছু পুস্তক ও জিনিস দেখাবেন যা চার্চে ও পরিবারে ব্যবহৃত হয়। এরকম পুস্তক বা দ্রব্যাদি তোমার ঘরেও কিছু কিছু থাকতে পারে। এগুলোর কয়েকটি তুমি আগে দেখেছ। কোনো কোনো জিনিস তোমার কাছে নতুন মনে হবার কারণ হলো, বাংলাদেশে বিভিন্ন মণ্ডলীতে এই পুস্তক ও জিনিসগুলো ব্যবহৃত হয়, যার সব কটি হয়তো তুমি চেনো না। বইগুলোর মধ্যে তুমি দেখতে পাবে ভিন্ন ভিন্ন মণ্ডলী কর্তৃক ব্যবহৃত service order; পুস্তিকা, বাইবেল, বাইবেল সহায়িকা, গান বই, অনুষ্ঠানসূচি পুস্তিকা ইত্যাদি। পরের পাতায় এরকম কিছু পুস্তিকার ছবি দেওয়া আছে। কিছু কিছু জিনিস বিভিন্ন পর্বে ও অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় যেমন— খেজুর পাতা, তেল, দ্রাক্ষারস সহ অন্যান্য।

এসো পুস্তক ও জিনিসগুলো স্পর্শ করি

টেবিলের উপর service order, অনুষ্ঠানসূচি পুস্তিকা, গান বই, বাইবেল, বাইবেল সহায়িকা, খেজুর পাতা, তেল ও দ্রাক্ষারস এই সমস্ত জিনিসগুলো এক এক করে শিক্ষক তোমাদের দেখাবেন। তিনি এগুলোর নাম বলবেন না। তুমি ঐ পুস্তক ও জিনিসগুলোর নাম মনে রাখতে চেষ্টা করবে। অবশ্য তুমি তোমার নোট খাতায় লিখেও রাখতে পারো। তারপর শিক্ষক তোমাদের ঐ পুস্তক ও জিনিসগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করতে বলবেন। তুমি যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করো তাহলে তোমার ভালো লাগবে। কারণ ঐ পুস্তকগুলো আগে হয়তো তুমি কখনো স্পর্শ করোনি। তুমি প্রত্যেকটি জিনিস হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখো। এতে একটু সময় লাগতে পারে কিন্তু শিক্ষক তোমাদের সময় প্রদান করবেন।

তোমার অনুভূতিগুলো বলতে চেষ্টা করো

শিক্ষক তোমাকে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো করবেন। তুমি যতটুকু পারো বলতে চেষ্টা করো। তোমাকে অন্যের কথাগুলো ভালোভাবে শুনতে হবে, তাহলে তুমি ঐ জিনিসগুলো সম্পর্কে আরও ধারণা লাভ করবে।

প্রশ্নগুলো হলো :

- তোমরা কী কী জিনিস দেখেছ?

- ওগুলো স্পর্শ করতে তোমাদের কেমন লেগেছে?

- জিনিসগুলো কী কী অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়?

- জিনিসগুলো কোথায় ব্যবহার করা হয়?

- চার্চে কী কী অনুষ্ঠান, পর্ব বা রীতি-নীতি পালন করা হয়?

উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করা

তুমি সকল কিছুতে উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করো কি না শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন। তাই তুমি সকল কিছুতে উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করো।

Content added By

গীর্জা/চার্চে অ্ংশগ্রহণ করব

তোমাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কাছ থেকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে আনতে হবে। প্রশ্নগুলো শিক্ষক তোমাদের print করে দিবেন। যদি print না করেন তাহলে তোমাদের লিখে নিতে হবে। তোমরা যখন পিতা-মাতা ও অভিভাবকের কাছ থেকে প্রশ্নগুলো করবে তখন তাদের সাথে বিনম্র আচরণ করবে। পিতা-মাতা বা অভিভাবক যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই, পিতা-মাতা বা অভিভাবক যেন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন।

তোমাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবককে যে প্রশ্নগুলো করতে হবে তা নিম্নরূপ :

- মণ্ডলীতে কী কী ঐতিহ্য আছে?

- কোন কোন সময় সেগুলো পালন করা হয়?

- কীভাবে পালন করা হয়?

- ঐতিহ্যগুলো পালনের মাধ্যমে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?

- কেন এই অনুষ্ঠান বা পর্বগুলো পালন করা হয়?

চার্চে অংশগ্রহণ করো

বিশেষ পর্বে তোমাকে যে কোনো একটি চার্চে অংশগ্রহণ করতে হবে। তুমি যে চার্চে অংশগ্রহণ করবে সেই চার্চের ফাদার বা পাস্টরের কাছ থেকে মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলো জেনে আসবে। তুমি সেগুলো কাগজে লিখবে। তারপর তুমি যা জেনেছ তা অন্যজনের কাছে বদল করবে। এই কাজের মধ্য দিয়ে তোমরা অন্যের কাছ থেকে পাওয়া ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলো জানতে পারবে। এর ফলে মণ্ডলীর ঐতিহ্য সম্পর্কে তোমাদের ধারণা আরও বৃদ্ধি পাবে। তুমি অন্যের কাছ থেকে পাওয়া নতুন ধারণাগুলো লিখে রাখবে। তোমার নিজের ধারণা ও অন্যের কাছ থেকে পাওয়া ধারণাগুলো সমন্বয় করে মণ্ডলীর ঐতিহ্যের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।

Content added By

ঐতিহ্যগুলোর তালিকা

আজকে তোমাদের দুটি দল করা হবে। দুটি দল থেকে দুজন দলনেতা তৈরি করা হবে অথবা স্বেচ্ছায় দল তৈরি করতে হতে পারে। তোমার পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কাছ থেকে পাওয়া ধারণাগুলো দলগতভাবে আলোচনা করতে হবে।

শিক্ষক আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিবেন। আলোচনার মাধ্যমে মণ্ডলীর ঐতিহ্যসমূহের একটি তালিকা তোমাদের তৈরি করতে হবে। তালিকা তৈরি করার জন্য তোমাদের ২০মিনিট সময় দেয়া হবে। তালিকা তৈরি শেষে শ্রেণিকক্ষে তোমাকে উপস্থাপন করতে হবে। যে ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলো তোমার পালন করতে আনন্দ লাগে তা নির্ধারণ করো।

↓ একজন যাজক/পুরোহিত একটি শিশুকে বাপ্তিস্ম দিচ্ছেন। আলোকচিত্র/রেভারেন্ড রোনাল্ড দিলীপ সরকার

 

Content added By

মন্ডলীর শিক্ষা ও গুরুত্ব বুঝব

আজকে তোমাদের শিক্ষক মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষার ওপর বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন। শিক্ষক যখন ব্যাখ্যা করবেন তখন কোনো কঠিন বিষয় থাকলে প্রশ্ন করে জেনে নিও।

মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাসমূহ উপস্থাপন

পবিত্র বাইবেল খ্ৰীষ্টিয় মতবাদের প্রাথমিক ও একমাত্র উৎস। পবিত্র বাইবেল নিজেই একমাত্র চূড়ান্ত কৰ্তৃপক্ষ কিন্তু ঐতিহ্যগুলো বিশ্বাসের অনুশীলনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে সমস্ত নিয়মাবলি মাণ্ডলীক কার্যক্রমে যুগ যুগ ধরে চর্চা হয়ে আসছে তাকে মাণ্ডলীক ঐতিহ্য বলা হয়। যাকে খ্রীষ্টধর্ম বিশ্বাসের স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিও বলা হয়। ঐতিহ্যসমূহ মাণ্ডলীক অনুশীলন ও বিশ্বাসের অংশ। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যসমূহ মণ্ডলীর কার্যক্রমের মান বজায় রেখে মণ্ডলীকে সুশৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করতে সহায়তা করছে। ঐতিহ্যগুলো পবিত্র বাইবেল নির্দেশিত। যীশুর সময় লোকেরা মানব সৃষ্ট কিছু কিছু নিয়ম পালন করছিল। যীশু তাদের সতর্ক করে বলেছেন, “আপনারা তো ঈশ্বরের দেওয়া আদেশগুলো বাদ দিয়ে মানুষের দেওয়া চলতি নিয়ম পালন করছেন।” যীশু তাদের আরও বললেন, “ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের চলতি নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভাল উপায়ই আপনাদের জানা আছে” (মার্ক ৭ : ৮-৯)। ঐতিহ্যগুলো প্রধানত মণ্ডলী কর্তৃপক্ষের ঐতিহাসিক শিক্ষা যেমন চার্চ কাউন্সিল, পোপ, কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক, ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ, চার্চের আধ্যাত্মিক পিতাগণ, চার্চ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ধর্মমত, শৃঙ্খলা, উপাসনা এবং ভক্তিতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটেছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খ্রীষ্ট মণ্ডলী রয়েছে। মণ্ডলীর কিছু কিছু বিশ্বাসও আলাদা। রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীসহ কিছু কিছু মণ্ডলী ধর্মানুষ্ঠানগুলোকে সাতটি শ্রেণিতে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এগুলো হলো দীক্ষার ধর্মানুষ্ঠান বা সংস্কার : বাপ্তিস্ম (এই অনুষ্ঠানের একটি ছবি আগের পাতায় দেওয়া আছে), প্রভুর ভোজ ও হস্তার্পণ। নিরাময়ের সংস্কার : পাপ স্বীকার ও অন্তিমলেপন। সেবার সংস্কার : যাজকবরণ ও বিবাহ। এই ৭টি সংস্কার ১৪৩৯ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অব ফ্লোরেন্স কর্তৃক নির্ধারিত হয়। পরে ১৫৪৫-১৫৬৩ সালের মধ্যে কাউন্সিল অব ট্রেন্ট থেকে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়। রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিশ্বাসীগণ নাইসীয় ক্রীড (বিশ্বাসমন্ত্র/বিশ্বাসসূত্রে) বিশ্বাস করেন।

রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী ছাড়াও অন্যান্য মণ্ডলী বাংলাদেশ রয়েছে তাদেরকে প্রোটেস্ট্যান্ট বলা হয়। তাদের মধ্যে এ্যাডভেন্টিস্ট, এ্যাংলিকান, ব্যাপ্টিস্ট, লুথারান, মেথোডিস্ট, পেন্টিকস্টাল, এ্যাসেম্বলিজ অব গড়, ন্যাজ্যারিন, প্রেসব্রিটারিয়ান ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলীগুলোর মধ্যে কোনো কোনো মণ্ডলীতে সংস্কারের পরিবর্তে অধ্যাদেশ কথাটি ব্যবহার করা হয়। যেমন— ব্যাপ্টিষ্ট মণ্ডলীতে দুটি অধ্যাদেশ আছে। পবিত্র প্রভুর ভোজ ও অবগাহন।

বাইবেল পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাইবেল ঈশ্বর নিশ্বসিত বাক্য। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। বাক্য পাঠ, প্রার্থনা, উপবাস, দান করার মতো বিষয়গুলোও কোনো কোনো মণ্ডলীর ঐতিহ্য। যাজকীয় বস্ত্র, উপাসনা পরিচালনার রীতি-নীতি ও উপাসনা পরিচালনার ধারাবাহিকতাও কোনো কোনো মণ্ডলীর ঐতিহ্য। খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীর ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা পর্ব পালন করা হয়। যেমন— আগমনকাল (Advent), বড়দিন (Christmas), উপবাসকাল (Lent), খর্জুরপত্র রবিবার (Palm Sunday), পুণ্য সপ্তাহ (Holy Week), যীশুর মৃত্যু (Good Friday), যীশুর পুনরুত্থান (Easter), যীশুর স্বর্গারোহণ (Ascension), পবিত্র আত্মার অবতরণ (Pentecost), ইত্যাদি।

মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলোর উপকারিতা

- ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রশংসা করা : বিশ্বাসী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে ঈশ্বর সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর প্রশংসা করা ন্যয়সংগত। তিনি সমস্ত প্রশংসা পাবার যোগ্য। ঐতিহ্যগুলো ঈশ্বরকে প্রশংসা করার নির্দেশনা প্রদান করে।

- বাইবেলের শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করা : পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী মণ্ডলীর সদস্যপদ লাভ, বাপ্তিস্ম, উপাসনা, বিবাহসহ পবিত্র কার্যক্রমগুলো মণ্ডলীতে প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে একটি শৃঙ্খলা ও অনুশীলন প্রতিষ্ঠিত হয়।

- ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখা : ঐতিহ্যগুলো চর্চা করার মধ্য দিয়ে ভ্রান্ত শিক্ষা প্রতিরোধ করা হয়। পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা, বিশ্বাস ও অনুশীলন স্বীকার করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস দৃঢ় হতে সহায়তা করে।

- ইতিহাস সমর্থন করা : ইতিহাসের আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে মণ্ডলীর ঐতিহ্যগুলো সত্যিকারের ইতিহাস থেকে এসেছে। এগুলো কোনো বিজ্ঞাপন বা মনস্তাত্ত্বিক কারসাজির দ্বারা সৃষ্ট নয় বরং ঈশ্বরের বাক্যের নিয়মিত ও শক্তিশালী ব্যাখ্যামূলক প্রচারের মাধ্যমে এসেছে। ঐতিহ্যগুলো ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা সমর্থিত।

শিক্ষক তোমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো সহজ করে বুঝিয়ে বলবেন। মনে রেখো তোমাকে আগ্রহের সাথে মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষাগুলো শিখতে ও ধারণ করতে হবে। বিষয়গুলো একটু কঠিন হলেও কখনো বিরক্ত হবে না।

Content added By

ঐতিহ্য ও শিক্ষার চর্চা

তুমি মণ্ডলীর ঐতিহ্য ও শিক্ষা সম্পর্কে যা শিখেছো তার প্রেক্ষিতে কমপক্ষে ৪টি ঐতিহ্য সম্পর্কে তোমাকে শ্রেণিকক্ষে বলতে হবে। ঐ চারটি বিষয়ের মধ্য থেকে যে দুইটি বিষয় তোমাকে আকৃষ্ট করেছে তা তোমাকে তোমার নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। এ কাজ তুমি নিজে করতে পারো, তোমার সহপাঠীকে নিয়েও করতে পারো। তুমি ঐতিহ্যগুলো কীভাবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছ তা পরবর্তী সময়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।

শিক্ষক তোমাকে উপস্থাপন করতে সহযোগিতা করবেন। উপস্থাপনের জন্য তোমার যদি কোনো সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় তাও শিক্ষক তোমাকে সরবরাহ করবেন। উপস্থাপন শেষে তোমার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তা তুমি করতে পারো। তোমাকে যদি তোমার সহপাঠী কোনো প্রশ্ন করে তার উত্তর দেবার জন্য তুমি প্রস্তুত থেকো। তুমি তাদের সহজভাবে বুঝিয়ে বোলো ।

 

Content added By

চলো যীশুর দর্শন সম্পর্কে জানি

Please, contribute to add content into চলো যীশুর দর্শন সম্পর্কে জানি.
Content
Promotion